বাংলাদেশে প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি থেকে ভিন্ন পলিটেকনিকে পড়াশোনা বা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা, কারণ মাত্র এস এস সি পাশ করার পরেই চার বছর ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করে খুব দ্রুত ক্যারিয়ার শুরু করা যায়। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার প্রসার যেমন ঘটেছে তেমনি এই শিক্ষার চাহিদাও ব্যাপক হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট গুলো অন্যতম ভূমিকা পালন করে আসছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাংলাদেশে মোট ৫০টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে। এছাড়াও আরো ৪২টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রয়েছে দেশের প্রধান প্রধান জেলা শহরগুলোতে। বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রয়েছে অসংখ্য। আর কয়েকদিন পরেই এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। এসএসসি পাস করার পর যারা পলিটেকনিকে পড়াশোনা করতে আগ্রহী বা ভাবছেন করবেন তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। চলুন তাহলে পলিটেকনিকে ভর্তির গাইডলাইন জেনে নেই।
পলিটেকনিক এ পড়ার সুবিধাঃ
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট গুলো থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য ভর্তি হওয়ার সুযোগ আছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), অ্যাসোসিয়েট মেম্বার অফ দ্য ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ার্স সহ দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়া রয়েছে বিদেশে ও পড়াশোনার সুযোগ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য বাড়ছে কর্মক্ষেত্র ও কাজের পরিধি। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মরত ইঞ্জিনিয়ারদের বেশিরভাগেই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। প্রতিবছর বেশকিছু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার চাকরির সুবাদে যাচ্ছেন ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলোয়। সবমিলিয়ে বলতে গেলে ডিপ্লোমা কোর্স শেষে আপনি কিছু না কিছু একটা করতে পারবেন।
পলিটেকনিকে ভর্তির প্রক্রিয়াঃ
পলিটেকনিকে ভর্তির প্রক্রিয়া মূলত দুই ধরনের। সরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি এবং অন্যটি হলো বেসরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি। আপনি যদি বেসরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি হতে চান তাহলে এসএসসিতে ২.৫ গ্রেড থাকলেই চলবে। আর আপনাকে এর জন্য প্রতি মাসে টিউশন ফি এবং প্রতি ৬ মাস পরপর সেমিস্টার ফি পরিশোধ করতে হবে। আপনি যদি সরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই এসএসসিতে ৪.৮০ থেকে ৫.০০ পর্যন্ত গ্রেড থাকতে হবে। তারপর ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে ভর্তি করানো হয়। সরকারি পলিটেকনিক এ পড়ার সুবিধা হল তেমন কোন খরচ নেই বলতে গেলে একেবারে কম।
পলিটেকনিকে ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতিঃ
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করে দুই শিফটে। প্রথম শিফটে আবেদন করতে পারবে চলতি বছর এবং পূর্ববর্তী দুই বছরে পাস করা শিক্ষার্থীরা আর দ্বিতীয় শিফটে যে কোন বর্ষে পাস করা শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে।ভর্তি পরীক্ষা হবে মোট ১০০ নম্বরের, যেখানে ৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা ও ৫০ স্কোর। লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো হবে বাংলা ও ইংরেজি থেকে ১৫ নম্বর,পদার্থ ও রসায়ন থেকে ১৫ নম্বর, গণিত থেকে ১৫ নম্বর এবং সাধারণ জ্ঞান ৫ নম্বরের। এসএসসি জিপিএ কে ১০দ্বারা গুণ করে প্রাপ্ত স্কোরের সঙ্গে নম্বর যোগ করে মেধা তালিকা প্রণয়ন করা হয়।
বিষয় ও আসন সংখ্যাঃ
সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা এইসব ইনস্টিটিউটগুলোতে যেসব বিষয় পড়ানো হয়, সেগুলো হলোঃ আর্কিটেকচার, অটোমোবাইল, কেমিক্যাল, সিভিল, কম্পিউটার, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, ফুড, পাওয়া্র, মেকানিক্যাল, প্রিন্টিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, গ্লাস, সিরামিক, ইলেকট্রোমেডিক্যাল, মেরিন, শিপবিল্ডিং, সার্ভেয়িং, কনস্ট্রাকশন, টেলিকমিউনিকেশ্ন, এনভায়রনমেন্টাল, রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং, কম্পিউটার সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন, গার্মেন্টস ডিজাইন অ্যান্ড প্যাটার্ন মেকিং, ইন্সট্রুমেন্টেশন এন্ড প্রসেস কন্ট্রোল, ডেটা টেলিকমিউনিকেশন এন্ড নেটওয়ার্কিং, এয়ারক্রাফট মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মাইনিং এন্ড মাইনসার্ভে টেকনোলজি। চার বছরে মোট আটটি সেমিস্টারে পাঠ দান করা হয়ে থাকে। আসন সংখ্যা ৪০ থেকে ১৬০ টি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে অতিরিক্ত আরো ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়।
সবশেষে, শিক্ষার্থী বন্ধুদের জন্য আজকের পলিটেকনিকে ভর্তির গাইডলাইন টি আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে এবং ভবিষ্যতের পড়াশোনা এবং ক্যারিয়ার চিন্তা করার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি কাজে আসবে। সবার জন্য রইল শুভকামনা।