বাংলাদেশে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ উচ্চাকাঙ্ক্ষী সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিয়ে থাকে তাদের গ্রাজুয়েশন পরীক্ষার পর, কিন্তু গ্রাজুয়েশন শুরুর সাথে সাথে যদি চাকুরীর প্রস্তুতি নেয়া আরম্ভ করা যায় তাহলে এটি একজন চাকরিপ্রার্থীকে 50 ভাগ এগিয়ে রাখতে পারে কেননা গ্রাজুয়েশন শেষ বা শিক্ষাজীবন শেষে চাকুরীর প্রস্তুতি নিতে অনেক সময় লেগে যায় তাই এটা যত তাড়াতাড়ি নেয়া যায় ততো ভালো। প্রতি বছরে বিভিন্ন চাকরির বিজ্ঞাপন প্রচার হয় সব প্রতিযোগীই কিন্তু তাদের স্বপ্নের সরকারি চাকরির দেখা পায় তা না, যারা সঠিকভাবে চাকরির প্রস্তুতি গ্রহণ করে কেবল তারাই সফল হয়। আশা করি সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নামক গাইডলাইন টি চাকরিপ্রার্থীদের সহায়ক হবে।

সরকারি চাকুরী পছন্দের কারণ

সরকারি চাকরি চাকরিপ্রার্থীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে এর কিছু কারণ আছে যেমন মাসিক বেতন, জীবনভর পেনশন ব্যবস্থা, সরকারি বাসস্থান, চিকিৎসা সেবা সর্বোপরি সামাজিক স্বীকৃতি।

সরকারি চাকরির তালিকা

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু সরকারি চাকরির তালিকা নিচে দেয়া হল:

  • বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস: চাকুরী প্রার্থীদের পছন্দের তালিকায় এক নম্বর স্থান অধিকার করে আছে। সিভিল সার্ভিসের অধীনে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ আছে যেমন শিক্ষক, ডাক্তার,পুলিশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্মকর্তা ইত্যাদি।
  •  ডিফেন্স সার্ভিস: যদি আপনি নিজেকে দেশের জন্য নিয়োগ করতে চান তাহলে আপনি ডিফেন্স সার্ভিস পছন্দ করতে পারেন, এতে শুধু বেতন বা পজিশন ভালো তা না আরো আছে আবাসিক ব্যবস্থা ও ভালো চিকিৎসা সেবা।
  •  ব্যাংক প্রবেশনারি অফিসার: বাংলাদেশে ব্যাংক সেক্টরে চাকরির সুবিধা এবং বেতন অনেক বেশি। তাই সরকারি ব্যাংক চাকরিপ্রার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকে।
  •  বিজ্ঞানী পদে চাকুরী: বিজ্ঞানী পদে চাকুরী বাংলাদেশে অন্যতম জনপ্রিয় সরকারি চাকুরী। বিভিন্ন সরকারি অরগানাইজেশন যেমন বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার এন্ড রিসার্চ সেন্টার ইত্যাদি জায়গায় বিজ্ঞানীর প্রয়োজন হয়।
  •  রেলওয়ে অফিসার: আপনি যদি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারী হন তাহলে এই চাকরিটি আপনার জন্য ভালো এতে আপনি রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। বাংলাদেশে সরকারি এই চাকরিতে ব্যাপক সুবিধা আছে। সরকারি বাড়ি এবং গাড়ি ও দেয়া হয়।
  •  ইন্সুরেন্স চাকরি: বাংলাদেশের সরকারি ইন্সুরেন্স আছে যেগুলোতে অনেক ভালো পদ আছে এবং চাকরির পরিবেশ ও সুবিধা অনেক ভালো। 

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি: করণীয় কিছু বিষয়

যদি আপনি আপনার স্বপ্নের সরকারি চাকরি পেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই পরীক্ষা সম্পর্কে জানতে হবে কিভাবে নিয়োগ হবে, পরীক্ষার ধরন এবং সিলেবাস কেমন হবে? এগুলো হলো সঠিক এবং স্মার্ট প্রস্তুতির ধারণা।

  • দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতিঃ চাকরির জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি অবশ্যই রাখতে হবে কেননা আপনাকে অনেকের সাথে প্রতিযোগিতা করে চাকরি পেতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে সাথে আপনাকে নিয়মিত অনুশীলন করে যেতে হবে তবেই আপনি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।
  • রুটিন তৈরি করাঃ রুটিন তৈরি করে সেই অনুযায়ী পড়াশুনা করা এবং নিয়মিত সেই রুটিন ফলো করা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য পর্যাপ্ত সময় ভাগ করে নিয়ে রুটিন তৈরি করা অবশ্য কর্তব্য।
  • সিলেবাস সম্পর্কে ধারণাঃ একজন পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই সিলেবাস সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে গুরুত্বপূর্ণ টপিক গুলো নিজের দখলে রাখতে হয় কারণ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সেখান থেকেই বেশি আসে।
  • নিয়মিত খোঁজ- খবর রাখাঃ কোন ধরনের চাকরির জন্য কি ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে এসব বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা জরুরী। এক্ষেত্রে সিনিয়র ভাই-বোনেরা বড় সহায়ক হতে পারে।যারা সদ্য চাকুরীতে প্রবেশ করেছে তাদের থেকে ও চাকরির ক্ষেত্র, পরিবেশ অবস্থা নিয়েও আলোচনা করতে পারেন।
  • সাম্প্রতিক বিষয়ে পড়াশোনাঃ নিয়োগ পরীক্ষার একটি বড় অংশ সাম্প্রতিক বিষয়।বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী থেকে প্রশ্ন আসে তাই নিয়মিত কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট নিউজ, আজকের বিশ্ব, পত্রিকা এগুলো পড়ার অভ্যাস করতে হবে। 
  • বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধানঃ পরীক্ষার জন্য বিগত বছরের প্রশ্ন সমূহ সমাধান করতে হবে বারবার। এক্ষেত্রে জব সলুশন টাইপের বই সহায়ক হয়। তাছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা হয়।
  • নিজের উপর আস্থা রাখাঃ আমাকে দিয়ে হবে না , হচ্ছে না এগুলো সবার আগে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। নিজের উপর আস্থা রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।হতাশ হওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে যারা সরকারি চাকরি পায় তারা আপনার আমার মতোই মানুষ। 

চাকরির প্রস্তুতি: নিয়োগ সম্পর্কে জানা

সরকারি চাকরি পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে এর নিয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। চাকরি প্রার্থীকে নিয়োগ সম্পর্কে ধারণা রেখেই তার পড়াশোনার প্রস্তুতি নিতে হবে। যদিও আগে একটা চাকরির পরীক্ষার ধরন থেকে আরেকটা চাকরির পরীক্ষার ধরন আলাদা হতো কিন্তু বর্তমানে সকল সরকারি চাকরির নিয়োগ নীতিমালা প্রায় একই রকম। নিচে সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার স্টেপগুলো তুলে ধরা হলো:

  1.  প্রিলিমিনারি বা বাছাই পরীক্ষা
  2.  লিখিত পরীক্ষা
  3.  মৌখিক পরীক্ষা
  4.  মেডিকেল টেস্ট 

একজন প্রার্থীকে এক এক করে উপরে বর্ণিত ধাপগুলো অতিক্রম করতে হয়। প্রার্থী যখন বাছাই এবং লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তখন সে মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে। পরে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর একজন চাকরিপ্রার্থী তার নির্দৃষ্ট পদে আসন পায়। তাই এসকল ধাপ সম্পর্কে জানা খুবই দরকার।

সরকারি চাকরি পাওয়ার উপায়ঃ নিজের পরিকল্পনা তৈরি

সরকারি চাকরি পাওয়ার সবচেয়ে বড় উপায় হল নিজের পড়াশোনার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা। সে ক্ষেত্রে কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যেমনঃ

  • আপনি কোন বিষয় ভালো পারেন আর কোন বিষয়ে দুর্বল এগুলো মার্ক করে রাখুন তারপর কঠিন বিষয়গুলো বার বার পড়ুন। গুরুত্বপূর্ণ টপিক গুলো ও মার্ক করুন।
  •  পরীক্ষার কাট মার্ক সম্পর্কে ধারনা রাখুন। বর্তমানে নিয়োগ পরীক্ষায় আসা সকল টপিকগুলো সমান গুরুত্বপূর্ণ।
  • প্রতিটি বিষয়ের উপর সময় ভাগ করে নিয়ে পড়াশোনা করুন। কারণ প্রতিটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।
  • কনসেপ্ট বুঝতে চেষ্টা করুন এবং বিশ্লেষণমূলক পড়াশুনা করুন যাতে একেবারে বাছাই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় লিখিত পরীক্ষার ও প্রস্তুতি অর্ধেকটা হয়ে যায়।
  •  কোন একটা টপিক শেষ করে সেই টপিক ভিত্তিক প্রশ্ন ও সাজেশন অনুশীলন করুন।
  •  প্রতিদিন টেস্ট পেপার সলভ করুন আর দেখুন আপনি কোথায় পিছিয়ে আছেন। আপনার ভুলগুলো শুধরে নেয়ার চেষ্টা করুন।
  •  প্রতিদিন রিভাইজ করুন এমনকি যেসব বিষয়ে আপনার ভালো দখল আছে।

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি এর জন্য কিছু বই

বাজারে বিভিন্ন ধরনের বই পাওয়া যায়। সেগুলো যে সব ভালো তা নয়, কিছু বই অনেক বেশি ইনফরমেটিভ এবং অনুশীলন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। যেমন: mp3 সিরিজের বই সমূহ, প্রফেসরস প্রকাশনীর বই, জব সলুশন, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের বিশেষ সংখ্যা বিভিন্ন মডেল টেস্ট বই ইত্যাদি। ব্যাংক পরীক্ষার বই গুলোর মধ্যে অন্যতম সৈয়দ খাইরুল হাসান এর ব্যাংক জব, প্রফেসরস এর বই সমূহ, ওরাকল পাবলিকেশন্স এর বই গুলো উল্লেখযোগ্য। আরো অনেক ধরনের বই আছে। চাকরিপ্রার্থীদের অবশ্যই বইয়ের মান যাচাই করে বই কিনতে হবে যাতে সেগুলো থেকে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। কোনভাবেই কোয়ালিটি সম্পর্কে কম্প্রোমাইজ করা যাবেন।।

চাকরি পরীক্ষায় মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি

প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার পর মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় আসে।এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, আপনি বাছাই এবং লিখিত পরীক্ষায় বেশ ভাল নম্বর পেয়েছেন কিন্তু আপনি মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করতে পারেননি। এতে করে আপনার স্বপ্নের চাকুরীটি হাতছাড়া হতে পারে। তাই মৌখিক পরীক্ষার জন্য ও খুব জোরালো প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা আপনার পার্সোনালিটি দেখেও মৌখিক পরীক্ষার বিভিন্ন প্রশ্ন করতে পারেন। নিচে মৌখিক পরীক্ষায় করণীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বলা হল:

  • আপনি যে সরকারি পদের জন্য পরীক্ষা দিবেন তার ওয়েবসাইটে গিয়ে ভালোমতো পড়াশোনা করুন। কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করুন ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনাকে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করলে যেন তার উত্তর ভালোভাবে দিতে পারেন।এতে করে প্রশ্নকর্তার মনে আপনার জন্য ভালো ধারণা তৈরি হবে।
  • সব সময় আপডেট নিউজ জানার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে হাতের কাছে কাগজ-কলম রাখুন যাতে করে যখনই কোন প্রয়োজনীয় নিউজ আপনার চোখে পড়বে সেগুলো লিখে রাখতে পারেন।
  • মক ইন্টারভিউয়ের অনুশীলন করুন কিংবা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলুন যাতে আপনি ইন্টারভিউ বোর্ডে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারেন। 

সিভি লেখার নিয়ম চাকুরির ইন্টারভিউ এ ডাক পাওয়ার জন্যে

শেষ কথা

চাকরিপ্রার্থীদের কাছে সরকারি চাকরি হল সবচেয়ে নিরাপদ একটি চাকুরী। সরকারি চাকুরীর জন্য একজন প্রার্থীকে অবশ্যই লক্ষ্য নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী পড়াশুনা করতে হবে তবেই স্বপ্নের চাকরির দেখা মিলবে। তবে আপনাকে অবশ্যই পজিটিভ হতে হবে, পড়াশোনা পরিকল্পনামাফিক করতে হবে এবং ধৈর্য রাখতে হবে।সর্বোপরি আপনার সেরাটা আপনাকে দিতে হবে। আশা রাখি কিভাবে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিবেন সম্পর্কিত গাইডলাইন আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

আপনি চাইলে আমদের ফেসবুকে লাইক দিয়ে সাথে থাকতে পারেন। https://www.facebook.com/Bekarcombd