একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে কিংবা পেশাগত জীবনে সফলতা অর্জন করতে চাইলে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপনা করতে পারা একটি চমৎকার গুন। সঠিক প্রস্তুতিতে জনসম্মুখে কথা বলা এবং নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে নিজের যোগ্যতা নির্ণয়ের একটি গোপন সূত্র। উপস্থাপনার ক্ষেত্রে নার্ভাস হয়ে যাওয়া কিংবা ভয় পেয়ে সব এলোমেলো কথা বলা একটি সাধারণ ঘটনা। কিন্তু একটু সতর্ক হলে এরকম পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। আজকের আর্টিকেলে সেরকম কিছু দরকারি বিষয় নিয়ে কথা বলবো যাতে উপস্থাপনা করতে চাইলে কোন রকম বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। তবে একজন ভালো উপস্থাপক হতে চাইলে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে উপস্থাপনা করতে হবে। চলুন তাহলে দেখে নেই উপস্থাপনা করতে চাইলে জেনে রাখুন কিছু দরকারী বিষয় সম্পর্কে।
অনুশীলন করাঃ
একজন ভালো উপস্থাপক হতে চাইলে প্রতিনিয়ত অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে পাকাপোক্ত করতে হবে। একজন ভালো উপস্থাপক হতে চাইলে নিয়মিত অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই। নিয়মিত অনুশীলন করলে আপনার উপস্থাপনায় নতুন নতুন আকর্ষণ সংযোজিত হবে আর অনুশীলন না করলে একই কথা আপনাকে বারবার বলতে হবে। কোথায় কি রকম কথা বলতে হবে সেটা ভুলে যাবেন। তাই ভালো উপস্থাপক হতে চাইলে নিয়মিত অনুশীলন করুন।
স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নেয়াঃ
আপনি কথা বলার সময় শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন। ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। সবচেয়ে ভালো হয় কথা বলা শুরুর আগে জোরে জোরে শ্বাস নেয়া এবং ছেড়ে দেয়া। এতে পরবর্তী সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে। এতে মনে হবে না যে আপনার গলা বন্ধ হয়ে আসছে।
নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করাঃ
আপনি ব্যক্তিগত জীবনে যে রকম আচরণ করেন উপস্থাপনা করার সময় ঠিক একই রকম ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করুন। মনে করেন আপনি সাধারণত কথা বলেন খুব ক্যাজুয়াল ভাবে কিন্তু উপস্থাপন করার সময় যদি নিজেকে খুব বেশি ফরমাল হিসাবে উপস্থাপন করেন তবে লোকজনের কাছে আপনার কথা বলাটা কে মিথ্যা মনে হবে। তাই উপস্থাপনা করার সময় আপনি যেমন তেমনই থাকার চেষ্টা করুন। অতি রঞ্জিত করে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
গল্পাকারে কথা বলাঃ
অনেক উপস্থাপক আছে যারা উপস্থাপনা করার সময় খুব বেশি উপদেশ বা তথ্য দিয়ে কথা বলেন। অতিমাত্রায় উপদেশ কিংবা তথ্য দুটোই আপনার উপস্থাপনাকে লোকজনের কাছে বিরক্তিকর করে তুলবে। অতিরিক্ত উপদেশ কিংবা তথ্য দেয়ার পরিবর্তে আপনি যদি গল্প বলার মাধ্যমে আপনার কাঙ্ক্ষিত বিষয় উপস্থাপন করতে পারেন তবে তা লোকের কাছে অনেক বেশি শ্রুতি মধুর হবে। সুতরাং অযথা উপদেশ দিয়ে আপনার উপস্থাপনাকে একঘেয়ে না করে গল্পের মাধ্যমে আপনার উপস্থাপনাকে ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করুন। এতে দর্শকদের মধ্যে পজিটিভ এনার্জি লক্ষ্য করা যাবে।
শ্রোতাদের সম্পর্কে সচেতন থাকাঃ
উপস্থাপনা করার সময় দর্শকদের বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার দর্শকদের মধ্যে একেক মানুষ থাকবে, তাদের সকলের সম্পর্কে ধারণা নিতে চেষ্টা করুন। কিন্তু এই কাজটি করতে হবে অনেক অল্প সময়ের মধ্যে তাই এক্ষেত্রে আপনাকে অনেক বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। সফল হতে না পারলেও অন্তত চেষ্টা করুন। দর্শকদের নিজের মতো করে ভাবার চেষ্টা করুন কিংবা ভাবুন আপনি দর্শক হলে উপস্থাপকের কাছ থেকে কি রকম আশা করতেন? বিভিন্ন বয়সী দর্শকদের কিভাবে সম্বোধন করবেন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মনে করুন কোন হল রুমে মধ্যবয়স্ক দর্শক অথবা কলেজ স্টুডেন্ট দর্শক রয়েছে। এই দুই ধরনের নাগরিকের সামনে আপনার কথা বলার ধরন এবং সম্বোধন অবশ্যই ভিন্ন হবে। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে আপনার উপস্থাপনা কি টিভিতে বা ইন্টারনেটে লাইভ দেখাচ্ছে? এক্ষেত্রে আপনাকে কথা বলার সময় আরো সতর্ক থাকতে হবে।
সাবলীল ভাবে কথা বলাঃ
মনে রাখা প্রয়োজন যে, উপস্থাপনা করা বা বক্তব্য দেয়ার সময় স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সাবলীলভাবে কথা বলতে হবে। পাথরের মতো শক্ত হয়ে মুখ নাড়িয়ে কথা বললে উপস্থাপনা তার সাবলীলতা হারিয়ে ফেলে। সাবলীল ভাবে কথা বললে দর্শক-শ্রোতারা উপস্থাপকের কথা সহজেই বিশ্বাস করতে পারে। আর দর্শক বিশ্বাস করলে তখনই উপস্থাপনা সফল হয়।
দর্শকের মতামতকে গুরুত্ব দেয়াঃ
উপস্থাপনা করতে চাইলে দশকের দিকে নজর রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। দর্শকদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য রাখতে হবে। তারা কি শুনতে চায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে প্রয়োজন হলে নিজের উপস্থাপনায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। একই রকম উপস্থাপনা দর্শকদের মনোযোগ নষ্ট করে দেয়।
স্বাভাবিক কণ্ঠস্বরে কথা বলাঃ
উপস্থাপনা করতে চাইলে স্বাভাবিক কণ্ঠস্বরে কথা বলা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গলাউঁচু করে কিংবা এত আস্তে কথা বলা দুটোই পরিহার করতে হবে। এমন টোনে কথা বলতে হবে যেন আপনার ভয়েস ন্যাচারাল থাকে। চেঁচিয়ে কথা বললে নিশ্চয়ই উপস্থাপনা শুনতে ভালো লাগে না। কোন জায়গায় উচ্চস্বরে কথা বলতে হবে আবার কোন জাগায় নিচু স্বরে কথা বলতে হবে এই বিষয়গুলো উপস্থাপনা করতে চাইলে অনুশীলন করতে হবে। কথার মাঝে মাঝে একটু থেমে কথা বলতে হবে। আত্মবিশ্বাসী কন্ঠে কথা বলতে হবে।
সংক্ষিপ্ততাঃ
অনেকেই উপস্থাপনা খুব বেশি দীর্ঘায়িত করে ফেলেন। দীর্ঘ বক্তব্য সব সময় শ্রোতাদের বিরক্ত করে। উপস্থাপনার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে তুলে ধরতে হবে। যদি কম সময়ের মধ্যে আপনি গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় আপনার শ্রোতাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হন তবে আপনি একজন সেরা উপস্থাপক হতে পারবেন। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী একটা উপস্থাপনা আধা ঘন্টার চেয়ে বেশি হওয়া কোন মতেই ঠিক না। যদি সময় না মেনে উপস্থাপনা করেন তবে শ্রোতাদের কাছে আপনি বিরক্তিকর পাত্র হবেন। সুতরাং সেরা উপস্থাপক হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সময় সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
পরিশেষে এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে পারলেই উপস্থাপনা করার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হবে না। সর্বোপরি, ভালো উপস্থাপক হতে চাইলে অনুশীলনের বিকল্প নেই। উপস্থাপনার বিষয়গুলো লিখে সেগুলো বারবার অনুশীলন করতে পারলে উপস্থাপনা অনেক দুটি রুচিশীল হয় এবং দর্শকনন্দিত হয়। আশা রাখি, উপস্থাপনার জন্য এই দরকারি বিষয় গুলো আপনাদের উপকারে আসবে।