আমরা অনেকেই চাকরির বাজার, বিয়ে-শাদী কিংবা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য বায়োডাটা, সিভি, রিজুমে, প্রোফাইল ও পোর্টফোলিও কোনটা কি এবং কোন সময়ে কোনটাকে কাজে লাগাতে হয় এসব বিষয় সম্পর্কে জানি না। কখন কোনটা কে কাজে লাগাতে হবে এসব নিয়ে গুগোল আর ইউটিউব নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে করতে সময় শেষ করে ফেলি। ফলে কাজ আর হয় না। এখন অনেকেই হয়তো এরকম দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন বিশেষ করে যারা সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরিয়েছেন। তারা কোন ডকুমেন্ট এ কোন তথ্যটি রাখবে আবার কোনটি রাখবে না এসব নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকে। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনারা যারা আজকের আর্টিকেলটি পড়বেন আশা করি তাদের বায়োডাটা, সিভি, রিজুমে, প্রোফাইল এবং পোর্টফোলিও নিয়ে তেমন অসুবিধা হবে না। তাহলে চলুন সময় নষ্ট না করে বায়োডাটা, সিভি, রিজুমে, প্রোফাইল ও পোর্টফোলিও কোনটা কি জেনে নেই। 

বায়োডাটাঃ

আমরা অনেকেই জানি বিয়ের জন্য পাত্র বা পাত্রীর পরিচয় এবং যাবতীয় তথ্য সম্বলিত একটা ডকুমেন্ট তৈরি করতে হয় আর এই ডকুমেন্ট কেই বলা হয় বায়োডাটা। একটা পূর্ণাঙ্গ  বায়োডাটার মধ্যে একজন মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বেশি থাকে। আপনি কি করছেন, আপনার বর্তমান পেশা কি, আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড সহ সব পার্সোনাল তথ্য দিয়ে সাজাতে হয় বায়োডাটা। এরমধ্যে আরো থাকে আপনার ভাইবোনেরা কে কোথায় কি কাজ করছেন, আপনার ভাবি এবং ভগ্নিপতিরা কি করছেন এমনকি আপনার চাচা, ফুফু, খালা, খালু, মামা, মামি কে কোথায় আছেন তারা কি কাজ করছেন এবং আপনার পারিবারিক অবস্থান বিশেষ করে আপনার বাবা-মা কে কি কাজ করছেন বা করেছিলেন এসব তথ্য দিতে হয়। তবেই এই ডকুমেন্ট একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। সাধারণত বাংলাদেশে বিয়ে-শাদির জন্য বায়োডাটা তৈরি করতে হয়। 

সিভিঃ

সিভি সাধারণত বলা হয় উচ্চশিক্ষার জন্য বাহিরে পড়তে গেলে আবেদন করার সময় যে ডকুমেন্ট পাঠাতে হয়। এতে একজন মানুষের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে যে যে বিষয় গুলোর উপরে তার দক্ষতা ছিল সে বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হয়। যদি শিক্ষানবিস থাকা অবস্থায় কোন প্রজেক্টে কাজ করে থাকেন সেসব কাজের ফলাফল গুলোও উল্লেখ করতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন টপিক বিশেষ করে থিসিস টপিক এবং শিক্ষা জীবনের যেকোনো পুরস্কার সিভিতে উল্লেখ করতে হয়। উচ্চশিক্ষার জন্য আপনার কোন বিষয় পছন্দ এবং ওই বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বিষয়গুলোও উল্লেখ করতে হয়। এমনকি আপনার যদি কোন দেশীয় বা আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে কোন প্রকাশনা থাকে সেটিও সিভি উল্লেখ করতে হবে। কোন কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করলে কিংবা কোন কনফারেন্সে যোগদান করলে তারও উল্লেখ সিভিতে করতে হয়। উচ্চশিক্ষার জন্য অবশ্যই আইইএলটিএস করতে হয় তাই ভাষাগত দক্ষতা কতটুকু সেটা উল্লেখ করতে হয়। এবার আসুন সিভি কতটুকু হওয়া উচিত? সিভির দৈর্ঘ্য দুই পেজের বেশি না হওয়াই ভালো। বাহিরের দেশের পড়াশোনা করার জন্য যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কে সিভির সাথে লেটার অফ  মোটিভেশন অথবা স্টেটমেন্ট অফ পারপাস পাঠাতে হতে পারে। এই লেটার অফ মোটিভেশনে আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয় এ উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে যাচ্ছেন সেখানে নিজেকে কেন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনে করেন এ বিষয়টি খুব সুন্দর এবং সাবলীল ভাষায় লিখতে হয়। উচ্চ শিক্ষা লাভের পর দেশে ফিরে এই শিক্ষককে দেশের উন্নয়নের কাজে কিভাবে লাগাবেন এই ধরনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মূলক লেখা আপনার লেটার অফ মোটিভেশনকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলবে এবং আপনাকে নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলবে।

রিজুমেঃ

একজন ব্যক্তি যখন ছাত্রজীবন শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে চায় তখন যে ডকুমেন্ট তৈরি করতে হয় সেই ডকুমেন্টকে রিজুমে বলা হয়। রিজুমের সাথে সিভির পার্থক্য হল সিভিতে যেসব তথ্য উল্লেখ করার কথা বলা হয়েছে তার কোন কিছুই রিজুমে থাকবে না। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট একজন নতুন চাকরিপ্রার্থীর রিজুমে তার ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ বা জীবনের লক্ষ্য, প্রধান দক্ষতাগুলো কো কারিকুলাম এক্টিভিটিস, খণ্ডকালীন চাকরির অভিজ্ঞতা, স্বেচ্ছামূলক কাজের অভিজ্ঞতা প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়গুলোর দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়। আর অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দেখা হয় তার কর্মজীবনের অর্জনগুলোকে। আমাদের দেশে ইনফোগ্রাফিক বা ডিজাইন ভিত্তিক সিভির গ্রহণযোগ্যতা একদমই কম। এক পেইজর রিজুমেও অনেক মানবসম্পদ বিভাগের কর্মী ভালো চোখে দেখে না আবার অনেক বড় রিজুমে ও কেউ পড়ে দেখে না। কারণ একজন চাকুরীদাতা একটি রিজুমে যাচাই-বাছাই করতে সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে থাকেন তাই আমাদের দেশের অধিকাংশ মানব সম্পদ বিভাগের প্রধানরা শূন্য থেকে দশ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্নব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দুই পেজের এবং দশ বছরের অধিক অভিজ্ঞতা থাকলে সর্বোচ্চ তিন পেইজের রিজুমে তৈরীর ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই ক্ষেত্রে কোন জিনিসটি রিজুমে থাকবে আবার কোনটি থাকবে না, কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ আবার কোনটি কম গুরুত্বপূর্ণ সেটি নির্বাচন করা অনেকের কাছে বেশ কঠিন। তাই যে কোম্পানিতে যে পদের জন্য আবেদন করেছেন সেই সার্কুলারের সাথে সঙ্গতি রেখে আংশিক পরিবর্তন করে প্রত্যেক ক্ষেত্রে রিজুমে পাঠালে ইন্টারভিউতে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে রিজুমের সাথে সব সময় কভার লেটার পাঠাতে হয়। আপনি কেন সেরা, আপনাকে নির্বাচন করলে আপনি কোম্পানিতে কিভাবে অবদান রাখতে পারবেন ইত্যাদি এক পৃষ্ঠায় গুছিয়ে লিখতে হবে। কভার লেটারকে বলা হয় রিজুমের সারাংশ।

প্রোফাইলঃ

একজন ব্যক্তি যখন ক্যারিয়ারের উচ্চ শিখরে পৌঁছান তখন তার অর্জনগুলো এত বেশি যে তাকে যাচাই-বাছাই করতে সিভি কিংবা রিজুমে কোনটারই প্রয়োজন হয় না তখন তার অর্জনগুলোকে প্রকাশ করার জন্য যে ডকুমেন্টটি ব্যবহার করা হয় সেটাকে বলা হয় প্রোফাইল। বিভিন্ন কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নিজেদের প্রকাশ করার জন্য প্রোফাইল ব্যবহার করে থাকেন। আবার যারা উদ্যোক্তা হতে চান তাদেরকেও নিজের একটি প্রোফাইল তৈরি করতে হয়। এই প্রোফাইলে নিজের দক্ষতা অর্জন গুলোর দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়। এছাড়াও আপনি যখন একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করবেন তখন সেই প্রতিষ্ঠানের ও থাকবে একটি প্রোফাইল। প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল লেখার ক্ষেত্রে আপনার প্রতিষ্ঠান কোন ধরনের পণ্য বা সেবা দিয়ে থাকেন এবং কারা এই পণ্য বা সেবা নিয়েছেন তাদের মতামতের সনদপত্র দিয়ে প্রোফাইল তৈরি করা হয়। 

পোর্টফোলিওঃ

একজন ব্যক্তি যখন অনেকগুলো প্রজেক্টে কাজ করেছেন তখন সবগুলো প্রজেক্ট মিলে গঠিত হয় ব্যক্তির পোর্টফোলিও। অথবা একজন ব্যক্তি যখন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক,  তখন সবগুলো প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল মিলে গঠিত হয় ব্যক্তির গ্রুপ পোর্টফলিও।

আশা করি, যারা সদ্য চাকুরীতে ঢুকতে যাবেন তাদের কাছে কিংবা শিক্ষার্থীদের কাছে বায়ো ডাটা, সিভি, রিজুমে, প্রোফাইল ও পোর্টফোলিও নিয়ে যে সমস্যা এগুলো আর থাকবে না। এই আর্টিকেলটি পড়ার পর বুঝতে অসুবিধা হবে না যে কোনটি কোন কাজে ব্যবহার করা হয়। তাই এককথায় বুঝার সুবিধার জন্য বলা যাবে আপনি যদি বিয়ের জন্য কোন ডকুমেন্ট পাঠাতে চান তাহলে সেটা হবে বায়োডাটা। উচ্চশিক্ষার জন্য ডকুমেন্ট কে বলা হয় সিভি তার সাথে লেটার অফ মোটিভেশন অবশ্যই থাকবে। চাকরির আবেদন করার সময় পাঠাবেন রিজুমে, সাথে থাকবে কভার লেটার। বিজনেস করতে চাইলে তৈরি করতে হবে  প্রোফাইল এবং এই বিজনেস যখন বিশাল বড় আকার ধারণ করবে বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি হবে তখন তৈরি করতে হবে একটি পোর্টফলিও। ব্যাস এতোটুকুই বোঝার জন্য যথেষ্ট। লেখার সার্থকতা তখনই হবে যখন আপনারা উপকৃত হবেন।